বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ০২:২৬ অপরাহ্ন
সাভার পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে কুলি বিটের ইজারার নামে ব্যাপক চাঁদাবাজী হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয়পাশের বাসিন্দাদের বাড়ি নির্মাণ সামগ্রীবাহী ট্রাক, বাসা-বাড়ি পাল্টানোর সময় আসবাবপত্রবাহী পিকআপভ্যান বা ট্রাক থেকে পৌরসভার ইজারার টোল আদায়ের নামে এসব চাঁদাবাজী হচ্ছে। এলাকাবাসীর কাছ থেকে এ সব অভিযোগ পেয়ে সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল গনি পাড়া-মহল্লা বা শাখা রোডে ইজারার নামে এসব চাঁদাবাজী বন্ধে ইজারাদারকে সতর্ক করে গত ১লা জুন একটি নোটিশও দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও বন্ধ হয়নি ইজারাদারের এ চাঁদাবাজী।
সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল গণি কুলি বিটের ইজারাদার মো: আব্দুল আলীমকে এ বিষয়ে সতর্ক করেন। যার অনুলিপি দেওয়া হয়েছে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পৌরসভার সকল কাউন্সিলর, সাভার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে। কিন্তু মেয়রের এ নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে টোলের নামে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে ইজারাদার। ফলে ভুক্তভোগী মানুষের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে। চলতি বছর সাভার পৌরসভার কুলি বিটের ইজারা পেয়েছেন পার্শ্ববর্তী সিঙ্গাইর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে আব্দুল আলীম।
সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল গণি বলেছেন, টোল আদায়ের নামে ইজারাদার সরকারের সাথে সম্পাদিত ইজারার চুক্তিপত্র লংঘন করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ও মহাসড়কের বাহিরেও পণ্য/মালবাহী গাড়ীর মাল/পণ্য লোড-আনলোড ব্যতিত অন্যান্য যানবাহন, যেমন অটো রিক্সা, ইজিবাইক, রেন্ট-এ-কার, মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী নানাবিধ পরিবহন হতে পৌরসভার ইজারার নামে টোল আদায় করা হচ্ছে। তিনি ইজারাদারকে দেয়া নোটিশে পণ্য/মালবাহী যানবাহন হতে মালামাল বা পণ্য লোড-আনলোড ব্যতিত অন্যান্য যানবাহন ও শাখা রোড বা মহল্লায় টোল আদায় থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
একই সাথে সাভার পৌরসভার ব্যবস্থাপনাধীন সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন যানবাহন ও কুলিস্ট্যান্ড (অটোরিক্সা ও ইজিবাইক ব্যতিত) রেডিওকলোনী হতে ব্যাংক টাউন পর্যন্ত শুধুমাত্র ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে (শাখা রোড ও মহল্লা ব্যতিত) মালবাহী ট্রাক-পিকআপ-কভারভ্যান, লরির মালামাল লোড-আনলোডের ক্ষেত্রে মুদ্রিত রশিদের মাধ্যমে টোল আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়াও বর্ণিত আদেশ ও সম্পাদিত চুক্তিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলী পালনে ব্যর্থতায় ইজারা বাতিল করে দেয়ার কথা বলা হয়। সেই সাথে মূল্য বাজেয়াপ্ত করতঃ ইজারাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে সতর্ক কারা হয়েছে।
তবে ইজারাদার এ নির্দেশনা না মেনে আগের মতোই টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি করছে। তবে কিছু স্থানে চাঁদা আদায়েরে ধরণ পল্টেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু শর্ত ভেঙ্গে চলন্ত রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইক, পণ্যবাহি ভ্যানসহ বিভিন্ন ছোট গাড়ি থেকেও চাঁদা আদায় করছেন ইজারাদারের লোকজন। কোথাও রসিদ দিয়ে আবার বেশির ভাগ রশিদ ছাড়াই প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিওকলোনি থেকে ব্যাংক টাউন ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তায় সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড, ছোটবলি মেহের, গেন্ডা, টিয়াবাড়ি, উলাইলসহ বেশ কয়েকটি পাইকারি কাঁচাবাজার রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা যানবাহনে করে সবজি, ফলমূলসহ বিভিন্ন পণ্য এখানে এনে বিক্রি করেন। যানবাহনে পণ্য ওঠানামা করানোর ক্ষেত্রে পৌরসভা থেকে নির্দিষ্ট হারে টোল আদায়ের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইজারাদার চুক্তির শর্ত না মেনে পাড়া-মহল্লার বাড়ি নির্মাণের ইট, বালু, সিমেন্টবাহী ট্রাক, বাসা-বাড়ি পাল্টানোর মালবাহী ট্রাক থেকেও টোল আদায়ের নামে ব্যাপিক চাঁদাবাজী করছে। এতে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে শাহীবাগ চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ওই সড়কে চলাচলরত পিকআপ-কভারভ্যান, লরির, পণ্যবোঝাই চলমান ট্রাক থেকে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা করে পৌরসভার রসিদ দিয়ে টোলের নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আগে তারা চৌরাস্তার মোড় থেকে এ টোল আদায় করলেও এখন রাজাসন রোডের সাভার টেক্সটাইলের একটু সামনে এবং মজিদপুর রোডের রাজা হরিস চন্দ্রের প্রাসাদের সামনে থেকে চাঁদা তুলতে দেখা গেছে।
জানা যায়, শাহীবাগ চৌরাস্তার মোড়ে রাত-দিন দুই শিফটে ইউনিফর্ম পড়ে ৭/৮ জন রাত দিন ২৪ ঘন্টা টোলের নামে এ চাঁদা আদায় করে। এ ঘটনায় প্রায়ই বিভিন্ন যানবাহনের ড্রাইভারদের সাথে তারা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন এই চাঁদাবাজ গ্রুপটি। তবে ওই সড়কের যাত্রী ও চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদা আদেয়ের জন্য সড়কের মাঝখানে চলন্ত গাড়ি থামানোর কারণে সব সময় যানযট লেগেই থাকে। তবে ওই সড়কে চলাচলরত যানবাহনের মালিক ও ড্রাইভাররা টোলের নামে এধরণের চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য প্রশাসনের কার্যকরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
আনিছুর রহমান নামে এক পিকাপআপ চালক দৈনিক ফুলকিকে বলেন, সারাদিন যতবার যাবো ততবারই এই চাঁদা দিতে হয়। অনেক সময় কাছাকাছি বাসা পরির্বতনের জন্য শুধু রাস্তা পার হলেই গাড়ির সামনে এসে দাড়ায়। আমি কিস্তিতে গাড়িটা কিনে নিজেই চালাই। তবে এভাবে যদি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চাঁদাবাজি চলে তাহলে আমরা কার কাছে বিচার চাইবো।
ডগরমোড়া মহল্লার ভ্যান চালক সুমন মিয়া জানান, প্রতিদিন সকালে গেন্ডা বাসস্ট্যান্ডের কাঁচা বাজার থেকে কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মালামাল বহন করি। তিনি বলেন, ভ্যানে মালামাল তুললেও টাকা দিতে হয় না তুলেও দিতে হয়। তার গাড়ি পার্কিং বাবদ কোনো প্রকার রসিদ ছাড়াই ২০ টাকা দিতে হয়। টাকা না দিতে চাইলে ভ্যান আটকে দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
এদিকে সাভার বাসস্ট্যান্ডের উভয় পাশে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উপর রেন্ট-এ-কারের পার্কিং থেকেও টোলের নামে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। অন্যদিকে, টিয়াবাড়ি এলাকার মোহাম্মদীয়া পাইকারি কাঁচাবাজারে পণ্যবাহী অটোরিকশা ও রিকশাভ্যান থেকে ২০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করা হয়।
এ বিষয়ে ইজারাদার আব্দুল আলীম বলেন, নির্দিষ্ট স্থান ব্যতিত আমরা কোন স্থানে কোন প্রকার টাকা তুলি না। শাহীবাগ মোড়, আইচানোয়াদ্দা, রাজাশন আমতলা এলাকায় চাঁদা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা চাঁদা তোলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হউক। এরা কেউই আমার লোক নয়।
শোকজের পরেও এসব টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল গণি বলেন, আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি পণ্য বা মালবাহী যানবাহন হতে মালামাল লোড-আনলো ব্যতিত অন্যান্য যানবাহন ও শাখা রোড বা মহল্লায় টোল আদায় করা যাবে না। শুধু ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিওকলোনি থেকে ব্যাংক টাউন পর্যন্ত কুলিবিট ইজারা দেয়া হয়েছে। এর বাইরে যদি কেউ এ ধরনের টোল আদায়ের চেষ্টা করে তাকে ধরে পুলিশে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সেই সাথে এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বন জানান।
এবিষয় সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাজহারুল ইসলাম বলেন, এটা সম্পূর্ণ সাভার পৌরসভার বিষয়। পৌরসভা যেহেতু ইজারা দিয়েছে তারা চাইলে ওই ইজারাদারের বিষয় যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।